
নবীনগর প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের অভিযোগে মো. আবদুল্লাহ (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত এস আই মহিম উদ্দিনকে অবশেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশী নির্যাতনে ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার এসআই মহবমকে সাসপেন্ড ও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে মৃত ওই যুবকের লাশের ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার পর সোমবার রাতেই তার লাশ বাঞ্ছারামপুরে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। মৃত ওই যুবক বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের বাহেরচর (বাড়াইলচর) গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় নবীনগর থানায় এস আই মহিম উদ্দিনকে প্রধান আসামি সহ চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হযেছে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ওবায়দুর রহমানের কাছে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।এদিকে পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশী হেফাজতে এ আলোচিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গোটা এলাকায় এখন আলোচনার ঝড় বইছে। জানা যায়, ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের একটি বাড়িতে ৫ লাখ টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্দেহভাজন হিসেবে সলিমগঞ্জ বাজার থেকে ওই যুবক আব্দুল্লাহকে আটক করে মারধর করে বাড়াইলের লোকজন। প্রচন্ড মারধরের পর গুরুতর আহত অবস্থায়ই সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে আবদুল্লাকে সোপর্দ করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়িতে সোপর্দ করার পর পুরিশ তার উপর আরও নির্যাতন চালায়। এতে সে মারাত্মক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই চুরির ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে আবদুল্লাকে চারদিন আটকে রাখা হয়। অথচ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মহিম উদ্দিন এ ঘটনা নবীনগর সার্কেরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কিংবা থানার ওসিকে পর্যন্ত ঘটনাটি অবগত করেনি।
এদিকে আবদুল্লাহর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের বর্বর নির্যাতনে আব্দুল্লাহর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে সলিমগঞ্জ অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা চলার পর তার অবস্থার আরও অবনতি হলে রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে তাকে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সন্ধ্যায় (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়।
এদিকে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে, স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে।
ঘটনার সংবাদ পেযে পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তাঁর নির্দেশে সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই মো. মহিউদ্দিনকে সাসপেন্ড ও গ্রেপ্তার করে সোমবার দুপুরের পর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন বাড়াইর গ্রামের তবি মিয়া, আলামিন, আয়নাল হক এ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০–২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওবায়দুর রহমান সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন,’এ বিষয় মামলা নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এস আই মহিম উদ্দিন কে সাময়িক সাসপেন্ড ও গ্রপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
|